RAGGING
জানিনা রাত তখন কত , বিছানার পাশে রাখা মোবাইলে কয়েক বার আমার প্রিয় রিংটোন টা বেজে উঠলো , ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম প্রকাশ কল করেছে ।
জয়ন্ত ছেলেটার বয়সে খুব বেশি না এই বছর মনে হয় কুড়িতে পা দেবে ,আমার সাথে পরিচয় হয় একটা বন্ধুর মেসএ থাকাকালীন ,প্রথম প্রথম ওকে দেখে আমি ভেবেছিলাম বোধয় খুব অহংকারী ও ,তাই হয়তো কথা বলতে চাইছিলনা , কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম যে ওর একটা কানের খুব সমস্যা রয়েছে বলতে গেলে ঠিকমতো শুনতে পায়না, আমার নিজের কেমন যেন একটা খারাপ মনে হতে লাগলো নিজেকে নিয়ে ,,যাই হোক পরিচয় টা করে নিলাম ,সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্ব ,
ছেলেটা মন্দ নয় ,খুব হাসিখুশি ও যত খান আমার কাছে থাকে যত খান আমার আড্ডা দিই,
একটা জিনিস আমি ভালো করে লক্ষ করেছিলাম যে ও নিজের জীবন নিয়েও যতটাই খুশি ছিল , ততটাই বিষন্ন ছিল ও ওর নিজের স্কুল ও কলেজ জীবন নিয়ে , কারণটা হয় তো আমাকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না আপনাদের , স্বাভাবিক ভাবেই ওর কানে কম সোনাটা ওর জীবনের সবথেকে বড় একটি নেগেটিভ দিক ছিল যার জন্য ওর নিজের ফ্যামিলি থেকে শুরু করে স্কুল কলেজএর বন্ধুবান্ধবএর কাছে হাসির পাত্র ছিল , তাই ও সব সময় নিজেকে একাকী করে এই সব লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতো কিন্তূ কি আর করাযায় তখন ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তাই কলেজএর কিছু ছাত্রদের কাছে ও তখনও মজার পাত্র, ও যত ওদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো ততই ওকে বিরক্ত করতো ওই সব ছেলেরা , এককথায় বলতে গেলে ragging যাকে বলে , না তাও ও এইসবএ এতটুকু মনখারাপ করতে দেখিনি কখনো ওকে , কিন্তূ আমি বুঝতে পারতাম যে মনে মনে ও খুব কষ্ট আর দুঃখ পাচ্ছে ও তাই আমি ওকে ওসব ভোলাবার চেষ্টা করতাম ,,,,,, একদিন আমার সন্ধ্যায় আড্ডায় বসেছিলাম ও বলে উঠল "সত্যি এমন জীবনের কোনো মানেই হয়না যেই খানে এত দুঃখ আর লাঞ্ছনা " ,,হয়তো আমার কাছে এর কোনো উত্তরছিলো না ,কারণ জীবন টা ওর ,ভবিষৎ টা ওর আমি শুধু এইটুকু বলতে পারবো যে জীবন যুদ্ধে হাল ছাড়িসনা ভাই, কিন্তূ ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর কষ্ট টা বোঝার মতো ক্ষমতা হয় তো আমার ছিল না তাই চুপ করে রইলাম ,, আমি ওকে সব সময় এইটু বলতাম যে চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়েযাবে , আমার কথা শুনে ও শুধু একটু হেসে বলতো "হয়তো তাই হবে রে", খুব ভালো বন্ধু ছিল ও আমার অনেক সাহায্য করতো বিশেষ করে আর্থিক দিক থেকে , সে দিন কলেজএ ফাইনাল পরীক্ষার ফি টা নিয়েযেতে ভুলে গিয়াছিলাম , জয়ন্তই টাকাটা দিলো সেবার আমায় , কত বার ওকে টাকাটা ফিরত দেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তূ কিছু একটা বাহানা করে ও টাকাটা ফিরত নিতে চাইনি।।
আমি তখন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করছি, আর একটা মাস পরই আমার পরীক্ষা , একদিন সন্ধ্যায় জয়ন্ত আমার মেসে অস্থির ভাবে ঢুকলো আমার পাশের চেয়ারএ বসে কিছু একটা বলবে বলে ভাবছিলো কিন্তূ চুপ করে গেল , আমি বুঝতেই পেরছি কিছু একটা হয়েছে , ওকে জিজ্ঞাস করলাম কি রে কি হলো ? কিছু বলার আগেই ওর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেল , ওকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করলাম , তারপর ও যেটা বললো শুনে আমার ও মাথা গরম হয় গেল , ও আজ কলেজে যাওয়ার সময় ওকে কলেজএর কত গুলো ছেলে খুব মারধোর করেছে সবার সামনে , আমি তারপরই লক্ষ করলাম ওর মুখের ডান দিকটায় কেমন যেন ফুলে উঠছে, আমি আর দেরি করলাম না পাশের কয়েক জন বন্ধু দের ডাকলাম আর সবাই মিলে ঠিক করলাম কাল কলেজে গিয়ে প্রফেসার কে অভিযোক জানাবো , জয়ন্ত কে বললাম চিন্তা করিস না ওদের অবশ্যই শাস্তি হবে, এইবার জয়ন্ত যেন কেমন একটা ভয় পেয়ে বললো না প্রফেসারকে কিছু জানতে হবে না , আমরা বোঝালাম ওকে আমার তো আছি ওর সাথে ,তাও কেমন যেন ভয় ছাপ ওর মুখে লক্ষ করলাম আমি, আমি অনেক ভাবে জিজ্ঞাস করলাম ওকে কিরে বল কি হয়েছে কিন্তূ ও কিছু বললো না ,, আমি ওকে বললাম আজরাতটা এইখানে থেকেযা তোর মেস এ যেতে হবে না , ও বললো না থাকবে না অনেক করে বললাম ওকে কিন্তূ শুনলো না ও ,তাই আমি ওকে ওর মেস পর্যন্ত ছেরে আসলাম আসার সময় ওর মা কে ও ফোন করে বলছিল যে ও বেশ কিছু দিনের জন্য বাড়ি চলে যেতে চায় ও, জয়ন্ত কে আমি বুঝিয়ে বললাম চিন্তা করিস না কাল ওই ছেলে গুলোর কিছু একটা করে ছাড়বো, জয়ন্ত শুভ রাত্রি বলে মেস এর দরজা টা বন্ধ করে দিলো ,কিছু যেন একটা ভুল মনে হচ্ছিল আমার ,।
আমি তখন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করছি, আর একটা মাস পরই আমার পরীক্ষা , একদিন সন্ধ্যায় জয়ন্ত আমার মেসে অস্থির ভাবে ঢুকলো আমার পাশের চেয়ারএ বসে কিছু একটা বলবে বলে ভাবছিলো কিন্তূ চুপ করে গেল , আমি বুঝতেই পেরছি কিছু একটা হয়েছে , ওকে জিজ্ঞাস করলাম কি রে কি হলো ? কিছু বলার আগেই ওর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেল , ওকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করলাম , তারপর ও যেটা বললো শুনে আমার ও মাথা গরম হয় গেল , ও আজ কলেজে যাওয়ার সময় ওকে কলেজএর কত গুলো ছেলে খুব মারধোর করেছে সবার সামনে , আমি তারপরই লক্ষ করলাম ওর মুখের ডান দিকটায় কেমন যেন ফুলে উঠছে, আমি আর দেরি করলাম না পাশের কয়েক জন বন্ধু দের ডাকলাম আর সবাই মিলে ঠিক করলাম কাল কলেজে গিয়ে প্রফেসার কে অভিযোক জানাবো , জয়ন্ত কে বললাম চিন্তা করিস না ওদের অবশ্যই শাস্তি হবে, এইবার জয়ন্ত যেন কেমন একটা ভয় পেয়ে বললো না প্রফেসারকে কিছু জানতে হবে না , আমরা বোঝালাম ওকে আমার তো আছি ওর সাথে ,তাও কেমন যেন ভয় ছাপ ওর মুখে লক্ষ করলাম আমি, আমি অনেক ভাবে জিজ্ঞাস করলাম ওকে কিরে বল কি হয়েছে কিন্তূ ও কিছু বললো না ,, আমি ওকে বললাম আজরাতটা এইখানে থেকেযা তোর মেস এ যেতে হবে না , ও বললো না থাকবে না অনেক করে বললাম ওকে কিন্তূ শুনলো না ও ,তাই আমি ওকে ওর মেস পর্যন্ত ছেরে আসলাম আসার সময় ওর মা কে ও ফোন করে বলছিল যে ও বেশ কিছু দিনের জন্য বাড়ি চলে যেতে চায় ও, জয়ন্ত কে আমি বুঝিয়ে বললাম চিন্তা করিস না কাল ওই ছেলে গুলোর কিছু একটা করে ছাড়বো, জয়ন্ত শুভ রাত্রি বলে মেস এর দরজা টা বন্ধ করে দিলো ,কিছু যেন একটা ভুল মনে হচ্ছিল আমার ,।
প্রকাশ হলো জয়ন্তর রুুমমেট , ফোন টা কানেনিতেই প্রকাশের গলার স্বর "এখুনি এসো তুমি , জয়ন্ত তিনতলার ওপর থেকে ,,,,,,,,," আমি আর দেরি করলাম না কয়েকজন বন্ধু মিলে ছুটে গেলাম ,একটা গাড়ি জোগাড় করে সামনে হসপিটালএ নিয়ে গেলাম আমার গোটা জমা ওর রক্তে ভিজে গেল , তখন ও ওর শাস-প্রশ্বাস চলছে , আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে তখন , তখন ও ICU তে ওর বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়া হলো , আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম,,,,
না যখন ডাক্তার বললো ও পুরো পুরী কোমায় চলে গেছে মাথায় আঘাত লাগার ফলে, তখন মনে একটা বন্ধু কে যেন হারিয়ে ফেললাম চিরদিনের জন্য , ডাক্তার বললেন হয়তো আর ও কোম থেকে ফিরবে না ,ওর বাবা মা দিশাহারা হয়েপড়েছিলো এই কথা শোনার পর ,,,
পরের দিন সকালে কলেজে গিয়ে প্রফেসার কে অভিযোগ জানলাম পুলিশ ও তদন্ত করলো, জানা গেল ওই ছেলে গুলো যারা জয়ন্ত কে মারধর করেছিল ওরা একটা ভিডিও করেছিল জয়ন্তর, সবার সামনে ওকে অপমান করার মতো কিছু একটা ছিল ওই ভিডিওটায় ,আর ওটা আপলোড ও করা হয়েছিল বেশ কিছু ওয়েবসাইটে , যেটা জয়ন্ত মেনে নিতে পারেনি । তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো সে।
অপরাধী দের শাস্তি হয়েছে ঠিকই । কিন্তু জয়ন্তর মতো কত ছেলে মেয়ে ragging এর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত,।
আসুন RAGGING মুক্ত সমাজ গড়ে তুলি তাহলে হয়তো জয়ন্ত
মতো কিছু নিষ্পাপ প্রাণ বেঁচে যাবে,
। ragging দণ্ডনীয় অপরাধ ।
Comments
Post a Comment